আমরা আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে দেখি, প্রত্যেক বস্তু যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় থাকতে চায়। বস্তু স্থির থাকলে স্থির থাকতে চায় আর গতিশীল থাকলে গতিশীল থাকতে চায়। বল প্রয়োগ না করা পর্যন্ত বস্তু যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায় থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা, সেটাই হচ্ছে জড়তা। স্থিতিশীল বস্তুর স্থির থাকতে চাওয়ার প্রবণতাকে বলে স্থিতি জড়তা এবং গতিশীল বস্তুর সমবেগে গতিশীল থাকার প্রবণতাকে বলে পতি জড়তা।
জড়তার ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা
থেমে থাকা বাস হঠাৎ চলতে শুরু করলে বাসযাত্রীরা পিছনের দিকে হেলে পড়েন জড়তার কারণে । বাস যখন থেমে থাকে, তখন যাত্রীর শরীরও স্থির থাকে। কিন্তু হঠাৎ বাস চলতে শুরু করলে যাত্রীদের শরীরের বাসের সিটে বসে থাকা বাসসংলগ্ন অংশ গতিশীল হয় কিন্তু শরীরের উপরের অংশ জড়তার জন্য স্থির থাকে এবং স্থির থাকতে চার বলে পিছনে হেলে পড়ে।
চলন্ত বাস থেকে নামতে পেলে ঠিক তার বিপরীত ব্যাপারটি ঘটে। পুরো শরীরটি গতিশীল অবস্থায় পা যখন মাটি স্পর্শ করে, তখন শরীরের নিচের অংশ স্থির হয়ে গেলেও উপরের অংশ গতিশীল থেকে যায় এবং যাত্রী সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়।
একক কাজ:
একটি গ্লাসের উপর একটা কার্ড, বোর্ড বা শক্ত কাগজ রেখে তার উপর করেন রাখ। (চিত্র: ১০.০১)। হঠাৎ কার্ডটিকে জোরে টোকা দাও। কী দেখলে?
কয়েনটি প্লাসের মধ্যে পড়ে গেল কেন? হঠাৎ জোরে টোকা দেওয়ার জন্য কার্ডটি সরে গেল, কিন্তু জড়তার কারণে কয়েনটি তার নিচ্ছ স্থির অবস্থান বজায় রাখতে চাওয়ার জন্য গ্লাসের মধ্যে পড়ে গেল।
পাড়ি চালনার সময় গাড়ির সব আরোহীকে পতি জড়তার বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সিটবেল্ট পরতে হয়। সিটবেল্ট ছাড়া চলমান গাড়ির চালক যদি হঠাৎ ব্রেক করেন, কিংবা দুর্ঘটনার মাঝে পড়ে তখন জড়তার কারণে তিনি সামনে ঝুঁকে পড়বেন এবং স্টিয়ারিং কিংবা উইন্ড স্ক্রিনে আঘাত পাবেন (চিত্র ১০.২)। চিত্রের দ্বিতীয় অংশে দেখা যাচ্ছে, সিট বেল্ট চালককে উইন্ড স্ক্রিনে আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা করছে। কোনো বস্তুর দিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও আমরা জড়তার প্রভাব অনুভব করি। যদি কোনো বাস বা গাড়ি হঠাৎ বাঁক নেয়, তাহলে যাত্রীরা অন্য পাশে ঝুঁকে পড়ে। এর কারণ আরোহীও বাস বা গাড়ির গতির দিকে গতিশীল ছিলেন, বাস বা গাড়ি হঠাৎ দিক পরিবর্তন করলেও জড়তার কারণে আরোহীর মূল দিক বজায় রেখে গতিশীল থাকতে চান, তাই বাসের সাপেক্ষে অন্য পাশে সরে যান।
আরও দেখুন...